সমাজের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বাস্তব উদাহরণ।

ঘটনা_১: একজন অনেক দক্ষতার সাথে স্থানীয় বাজারে কাজ করে যাচ্ছিল, পাশাপাশি আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়েও নিজেকে মনোনিবেশ করল। একটা সময় দেখতে পারলো যে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তার কাজের পরিধি অনেকাংশে বেড়ে গেছে, তাই সে সিদ্ধান্ত নিল স্থানীয় বাজারের কাজটি ছেড়ে দিবে কিন্তু তার পরিবার, আশেপাশের লোকজন কি বলবে বা ভাববে এইসব ভেবে সে চাকরি ছাড়তে পারছে না। শুধুমাত্র সমাজের ভয়ে কে কি বলবে এভাবে আরো প্রায় দুই বছর শেষ করল। কিন্তু একটা সময় সে আর না পেরে এবং কাউকে না জানিয়ে সে তার স্থানীয় বাজারে জব ছেড়ে দেয় এবং পুরোপুরি মনোনিবেশ করে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে। এতে করে তাঁর আয়ের পরিমাণও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাকরি ছাড়ার কারণে তার পরিবার তথা আশেপাশের লোকজনদের অনেক কথা সহ্য করতে হয়।

ঘটনা_২: একজন বিসিএস নন ক্যাডার থেকে প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় এবং পাশাপাশি সে আইটি ফ্রিল্যান্সিং করে যাচ্ছিল। এই করোনাকালীন সময়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তার ইনকাম আগের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পায় কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় সময় দিয়ে তার ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনোনিবেশ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল। দুই দিক সামলাতে না পেরে অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল সে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দিবে এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করবে আর হয়ে উঠবে উদ্যোক্তা। চাকরি ছাড়াতে ফ্যামিলি আর গ্রামের অনেকেই নেতিবাচক কথা বলে। আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন যে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় অনেকেই সে বুঝাতে অপারক, কিছুই করার নেই তার।

ঘটনা _৩: একজন তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর, ধরাবাঁধা নিয়মে চাকরীর মধ্যে না গিয়ে আইটি ফ্রিল্যান্সিংকেই পেশা হিসাবে বেছে নেয়। এখানে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সে যে পরিমাণ আয় করছে, স্থানীয় বাজারের প্রথম শ্রেণীর জবের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি আয় করছে। তারপরও সে তার পরিবার তথা আশেপাশের লোকজনকে বুঝাতে পারছে না। একটা সময় সে একপ্রকার বাধ্য হয়েই জবের জন্য চেষ্টা করে এবং সরকারি চাকরি পেয়েও যায় কিন্তু জবের পোস্টিং অনেক দূরের জেলায় হওয়ায় পরিবারের সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে বলে তার মন চাচ্ছিল না, উভয় সংকট কিন্তু তারপরও সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়েই মনোনিবেশ করে এবং সফলতার সাথে কাজ করে চলছে এবং এখন সে উদ্যোক্তা।

ঘটনা_৪: একজন পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরের একটি নামি দামী অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, সেখানেই তার একটি রুমকে সে অফিশিয়াল সেটআপ দিয়ে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা বাদে অন্য জায়গায় অ্যাপার্টমেন্টের আশেপাশের লোকজন তার ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা শুরু করে। এমনকি তার সহজ সরল মা যখন গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে আসে এবং তাদের সাথে যখন মিশে তখন তার মাকে অনেকেই অনেক কথা শুনায়। একজনতো বলেই বসলো যে খালাম্মা আপনার ছেলে সারাদিন ঘরে বসে থাকে, কোন কাজকর্ম নেই কিছু টিউশনিও তো করতে পারে অথচ তিনি জানেনা ঘরে বসে ভাইটি যে পরিমাণ ইনকাম করছে, তা তাদের ফ্যামিলির ইনকামের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি।

চাইলে এরকম আরো হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে কিন্তু সমস্যাটা আসলে কোথায়? সমস্যাটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই সমাজের অনেকেই মনে করেন যে কোন একটি চাকরি অথবা সরকারি চাকরি হলে তো কথাই নেই সোনায় সোহাগা। মাস শেষে চাকরির বেতন এবং সরকারি চাকরির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সব মিলিয়ে তারা মূল্যায়ন করে বা ধরে নেয় এটাই সঠিক পন্থা জীবিকা নির্বাহের জন্য। তবে সত্যি বলতে এই করোনাকালীন সময়ে অনেকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আসলে আইটি ফ্রিল্যান্সিং কি এবং এখানে দক্ষ মানুষজন কিভাবে আয় রোজগার করে থাকে।

এবার আসি একটি সহজ গাণিতিক হিসাবে, একজন যখন ছোটবেলা থেকেই শুনতে থাকে যে, পড়াশোনা শেষে তাকে চাকরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। তার যে প্রতিভা তার মতো করে বিকশিত করবে সেই সুযোগ আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের কয়জনের আছে? পরিবারের চাপে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তারা বেছে নেয় চাকরি নামক সোনার হরিণ এবং ৩০ থেকে ৩৫ বছর চাকরি করে। অবসরের সময়, অনেকেরই রিটায়ারমেন্টের টাকা ছাড়া অবশিষ্ট কিছু থাকে না।

অপরদিকে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে যারা টপরেটেড এবং টপরেটেড প্লাস তাদের বেশিরভাগেরই মাসিক ইনকাম এদেশের জাতীয়দলের প্রথম ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের (ক্রিকেট বোর্ড থেকে পাওয়া বেতন) চেয়েও বেশি। আর আমি মনে করি আইটি ফ্রিল্যান্সারদের বেশিরভাগই বয়স ৪৫ বছর হওয়ার আগেই কাজ থেকে অবসরে যাবে এবং তাদের প্ল্যান B এর মাধ্যমে জীবনটাকে ইচ্ছেঘুড়ি বানিয়ে ঘুরে বেড়াবে। ঠিক সেই ছোটবেলার নাটাই হাতে ঘুড়ি উড়ানোর মতো, এবার হিসাবটা আপনিই মিলিয়ে নেন।

অতএব এ সময় এসেছে মানসিকতা পরিবর্তনের, এদেশের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তার ভিতরের প্রতিভাকে সত্যিকার অর্থেই কোন কাজে লাগানো যায়। সেটা হউক এদেশের আইটিতে, কৃষিতে, চিকিৎসা অথবা গবেষণায়।

পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। দেশের জন্য এবং দেশকে ভালোবেসে কাজ করুন। কোনো প্রকার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন, আমি যথাসাথ্য চেষ্টা করবো আপনার প্রশ্নের উত্তর বা আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য।

সমাজের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বাস্তব উদাহরণ।

Write a comment....

Scroll to top
error: Content is protected !!