রিলোকেশন চিন্তা করছেন? জেনে নিন উন্নত দেশে থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা, কতটা সহজ, কতটা কঠিন?

আমার ক্ষেত্রেও একই রকম হয়েছে। আমি যখন আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, অনেককে প্রশ্ন করতাম, কেমন অসুবিধা হতে পারে, কী কী খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এখন দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি কিছু সুবিধা আর অসুবিধা শেয়ার করছি। এগুলো আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে বাস্তবিকভাবে।
উন্নত দেশে থাকার সুবিধাগুলো:
পরিবেশ আর সৌন্দর্য: চারপাশের চাকচিক্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সত্যিই মন ভরে দেয়। ইউরোপের শহরগুলোতে এত বেশি পার্ক থাকে যে মনে হয় মানুষের চেয়ে পার্কের সংখ্যা বেশি। হাঁটতে বেরোলেই ২০০–৩০০ মিটার পরপরই একটা পার্ক পেয়ে যাবেন।
নিরাপত্তা:
আমার অ্যাপার্টমেন্টে আমি যদি বাইরে যাই, অনেক সময় দরজা বন্ধই করি না। জানলাও খোলা থাকে। এতদিনে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি। রাতে যখন পুরো রাস্তা ফাঁকা থাকে, তবুও মনে হয় আমি নিরাপদে আছি। এই মানসিক প্রশান্তিটা অমূল্য।
বিদ্যুৎ আর সিস্টেমেটিক ব্যবস্থা:
এখানে এখনো পর্যন্ত এক সেকেন্ডের জন্যও বিদ্যুৎ যেতে দেখিনি। স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা দেরি থাকলেও তাদের সিস্টেমেটিক পদ্ধতি সত্যিই প্রশংসনীয়।
প্রকৃতি আর আবহাওয়া:
ধুলোবালি-মুক্ত পরিবেশ, নির্মল বাতাস, সবুজ প্রকৃতি, শহর কিংবা গ্রাম যেখানেই যান, মন ভরে যায়। আমি নিশ্চিত, কেউ যদি এক সপ্তাহও এখানে কাটান, তিনি ফেরার পর এই জিনিসগুলো মিস করবেন।
খাবারের ভেজাল নেই:
বাংলাদেশে আমরা প্রতিদিন যে ভেজাল আর অস্বাস্থ্যকর খাবারের সমস্যায় ভুগি, এখানে সেটা নেই বললেই চলে। ফল, সবজি, দুধ কিংবা অন্য খাবার, সবকিছু অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর আর নিরাপদ।
মানুষের সম্মান আর আচরণ:
এখানে কেউ আপনাকে জাত, ধর্ম, আর্থিক অবস্থা দেখে বিচার করবে না। সবাই মানুষ হিসেবে সম্মান দেয়। লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে বাসে ওঠা সব জায়গায় একটা ভদ্রতা অনুভব করবেন।
কাজ-জীবনের ভারসাম্য:
এখানে অফিস শেষে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত সময়কে অনেক গুরুত্ব দেয়। পরিবার, ভ্রমণ, বিনোদন সবকিছুর জন্য আলাদা সময় থাকে। জীবনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে।
মিটিং বুকিং লিংক: Calendly লিংক Schedule a 30-Minute Consultation
অসুবিধাগুলো:
হোম সিকনেস: প্রথম এক-দু’মাস পর থেকেই বাংলাদেশের খাবার, সংস্কৃতি, আপনজনদের জন্য মন কেমন করবে। যারা এই অনুভূতিটা সামলাতে পারেন না, তাদের জন্য বিদেশে থাকা সত্যিই কঠিন হয়ে যায়, বৈদেশিক লাইফ যন্ত্রণার মনে হয়।
সব কাজ নিজেকে করতে হয়:
এখানে কোনো হেল্পিং হ্যান্ড নেই। রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘরের কাজ সবকিছু নিজেকেই সামলাতে হয়। যদিও অনেক কিছু অটোমেটিক সিস্টেমে হয়, তবুও যাদের এভাবে অভ্যস্ততা নেই, তাদের কাছে এটি কষ্টকর মনে হয়।
লিগ্যাল স্ট্যাটাসের গুরুত্ব:
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, যদি আপনি লিগ্যাল ওয়েতে না আসেন, তবে প্রায় সব জায়গাতেই সমস্যায় পড়বেন। চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাসাভাড়া সবকিছুর জন্য লিগ্যাল ডকুমেন্ট অপরিহার্য। অবৈধভাবে থেকে গেলে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে, বরং জীবনটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠবে।
ভাষাগত দুর্বলতা:
নতুন দেশে গিয়ে প্রথমেই যে সমস্যাটা অনুভব করবেন তা হলো ভাষা। আপনার যদি এখানকার ভাষায় দুর্বলতা থাকে, তবে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন। কিন্তু যত দ্রুত আপনি স্থানীয় ভাষা শেখার চেষ্টা করবেন এবং এখানকার মানুষের সাথে মিশবেন, তত দ্রুত এই সমাজে মানিয়ে নিতে পারবেন। ভাষা যতটা আয়ত্তে আনবেন, আপনার জন্য সুবিধাগুলোও তত দৃশ্যমান হবে।
শীতের তীব্রতা
বাংলাদেশের আবহাওয়ার তুলনায় ইউরোপের অনেক দেশেই শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপমাত্রা, বরফ, আর কুয়াশা অনেকের কাছে সহনীয় হয় না। শীতকালের এই কষ্ট মানিয়ে নিতে সময় লাগে, আর অনেক সময় তা অসুবিধাজনকও মনে হতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি:
আমার কাছে মনে হয়েছে, ইউরোপ বা যেকোনো উন্নত দেশে থাকার একমাত্র বড় চ্যালেঞ্জ হলো মন থেকে শক্ত থাকা। যদি হোম সিকনেস কাটিয়ে উঠতে পারেন, এবং লিগ্যাল উপায়ে সবকিছু করেন, তবে এখানে অসুবিধা বলতে আর কিছুই নেই। সুবিধার পরিমাণ এত বেশি যে এগুলো সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
শেষ কথা, প্রতিটি দেশেই সুবিধা-অসুবিধা আছে। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ আশা করি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। আপনার মতামত বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান!

মিটিং বুকিং লিংক: Calendly লিংক Schedule a 30-Minute Consultation

রিলোকেশন চিন্তা করছেন? জেনে নিন উন্নত দেশে থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা, কতটা সহজ, কতটা কঠিন?

Write a comment....

Scroll to top
error: Content is protected !!