জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক মানুষের সাথেই দেখা হয়, কথোপকথন হয়। এর মধ্যেই তাদের কিছু কথা আপনার টনক বা মোড় গুড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমরা এই বিষয়গুলো, কে কিভাবে নেই সেটিই মুখ্য বিষয়। তেমনি কিছু দৃশ্য ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমার সাথে ঘটেছে, তারই কিছু খন্ড বিশেষ আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
দৃশ্যপট এক:
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, জ্যামিতি খুব একটা বুঝতাম না, আমাদের ক্লাসের একজন মোটামুটি ভালোই জ্যামিতি বুঝতো, বিশেষ করে সম্পাদ্য এবং উপপাদ্য, চিত্রাংকন দেখেই বিবরণ বলে দিতে পারতো। স্যার তাকে খুব আদর করত, একদিন তাকে কথা প্রসঙ্গে স্যার বলে কত সুন্দর বুঝো তুমি। এমন ছাত্র না হলে কি চলে? স্যারের এই কথাটি আমি অনেক হিংসাত্মক সূত্রে নিলেও আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে গিয়েছিল, এর পরের ছয় মাসের চেষ্টায় আমি স্যারের প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিলাম। স্যার এখন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আমাকে ওই স্কুল পরিদর্শনের নিমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছেন। আমি স্যারকে কথা দিয়ে রেখেছি স্পেন থেকে ফিরেই স্যারের স্কুল পরিদর্শনে যাব। স্যারের জন্য অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভকামনা।
দৃশ্যপট দুই:
ক্লাস সেভেন-এইটে পড়া অবস্থায় আমি প্রায়ই মাথা ন্যাড়া করে ফেলতাম, তার জন্য কিছুটা লজ্জাও পেতাম এবং মাথায় সবসময় ক্যাপ পরতাম। তো একদিন স্কুলে আমার অন্যান্য সহপাঠীরা আমাকে অনেক ক্ষেপাচ্ছিল, দুষ্টামি করছিল। আমি এক স্যারের কাছে আমি নালিশ করি, তারপর স্যার বলল তুই মাথা ন্যাড়া করেছিস তো কি হয়েছে, তোকে ক্যাপ করতে হবে কেন? তুই কি কোন পাপ করেছিস বোকা? স্যার অনেক আদর করে একথাগুলো আমাকে বোঝাচ্ছিল, স্যারের এই কথাগুলো আমার মাথায় টনিকের মত কাজ করে এবং এর থেকে আমি শিখেছিলাম সহনশীলতা কি জিনিস।
দৃশ্যপট তিন:
ঢাকা শহরে প্রথম যেদিন আসি, সেদিন একটা লেখা চোখে পরে। যা আজও মনের মধ্যে গেঁথে আছে, এবং প্রতিনিয়ত মনেপরে। লেখাটি ছিল: “বড় হওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাই একজন মানুষকে বড় করে তোলে।” সুতরাং, অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে হলে ত্যাগ এবং পরিশ্রমটাও অন্যদের চেয়ে বেশিই দিতে হবে জীবনে। সেই প্রচেষ্টা নিয়েই এখনো এগিয়ে যাচ্ছি, সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন।
দৃশ্যপট চার:
আমি তখন আমার ইউনিভার্সিটির ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট, একদিন আমাদের এক ডিপার্টমেন্টের স্যার ক্লাস নিচ্ছিলেন এবং কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন তোমরা আর কিছুদিন পরে জব মার্কেটে ঢুকবা, তোমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দিও। এ প্রসঙ্গে স্যার একটি বাস্তবিক গল্প শেয়ার করলেন, বললেন আমাদের ব্যাচের একজন সহপাঠী ক্যাম্পাসে সারাদিন প্রেম, আড্ডাবাজি এসব করে বেড়াতো আর প্রতি সেমিস্টারে কিছু ব্যাকলগ থাকতো, তার জন্য আমরা নিজেরাও কিছুটা লজ্জা পেতাম। স্যার বলল, হঠাৎ দেখি সে অনেকটা সিরিয়াস এবং এতটাই সিরিয়াস ভার্সিটির পড়াশোনা শেষে সরাসরি সে জব পেয়ে যায় এরিকসন কোম্পানিতে এবং পাড়ি জমায় নরওয়েতে। বাস্তবিক জীবন নিয়ে স্যারের বলা কথাগুলো সত্যিই মনে ভীষণ ধাক্কা খায় ভার্সিটির পিছনের সারির একজন ছাত্র হিসেবে।
দৃশ্যপট পাঁচ:
২০১৮ সালের কথা, আমার বড় ছেলেকে সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি করেছি, সকালবেলা তাকে বক্সে টিফিন দিয়ে দিতে হতো। টিফিন খাওয়ার আগে শিক্ষকরা তাদের একটি কথা প্র্যাকটিস করাতো, কথা প্রসঙ্গে একদিন আমার কাছে শেয়ার করে এবং বলল বাবা খাওয়ার আগে আমরা স্কুলে সবসময় বলি “থ্যাংক ইউ গড ফর দি ফুড” কথাটি আমার অসম্ভব ভালো লাগে এবং মনে গেঁথে যায়। সেই থেকে আমিও প্র্যাকটিস করি এবং প্রতিবার খাওয়ার আগে মনে মনে বলি, উদ্দেশ্য চলতি পথে ঈশ্বরকে সবসময় স্মরণ করা।
পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে দয়াকরে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।